ব্রিকসে যোগদানে বাংলাদেশের লাভ-ক্ষতি প্রসঙ্গে—-অধ্যক্ষ এম ইব্রাহীম আখতারী
চলতি বছরের ২২-২৪ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১৫তম ‘ব্রিকস’ শীর্ষ সম্মেলন। জোহানেসবার্গের গৌতেংয়ের স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে (এস সি সি) এটি অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে এ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রন জানানো হয়েছে। ৯ জুলাই ২০২৩ ইং বাংলাদেশ এর পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ফারুক খান কর্তৃক আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণের বিষয়টি জানা যায়। উল্লেখ্য যে, উদীয়মান অর্থনীতির ৫টি দেশ যথাক্রমে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিন আফ্রিকাকে নিয়েই গঠিত হয়েছে”ব্রিকস”। ২০০১ সালে মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান “গোল্ডম্যান স্যাক্সের” তৎসময়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জিম ও’নীল ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত এবং চীন এর প্রথম আদ্যাক্ষর এর সমন্বয়ে এ জোটের নামকরণ করেন ব্রীক। অতঃপর ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করে ব্রিক। এটি নিয়ে ২০০৬ সালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সম্মেলনে এ চার দেশের মন্ত্রীদের সাথে আলোচনা করেন রুশ প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন। উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশে পারস্পরিক সহযোগিতা তথা সমৃদ্ধি অর্জনে কাজ করার অঙ্গিকার নিয়ে এ জোটের ১ম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। অতঃপর ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা জোটভুক্ত হওয়াতে এটির নতুনভাবে নামকরণ হয় ব্রিক্স। পরবর্তীতে ২০১১ সালে নতুন সদস্য দেশ নিয়ে চীনের বেইজিংয়ে পূনরায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালের ২১ জুলাই এই জোটের অধীনে অভিষেক ঘটে “নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক” (এনডিবি)’র। যার সদর দপ্তর চীনের সাংহাইয়ে। ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে ব্রিকস ব্যাংকে যোগদানের অনুরোধ করেন। অতঃপর ২০২১ সালের আগস্টে এনডিবির বোর্ড অব গভর্ণরসের সভায় নতুন সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে অনুমোদন দেয়। একই সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও উরুগুয়ে এ ২টি দেশকেও নতুন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। এতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে ১ (এক) শতাংশ শেয়ার কিনেছে বাংলাদেশ । উল্লেখ্য যে, এনডিবি মূলধন হিসেবে ৫ হাজার কোটি ডলার নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এখন যার পরিমাণ দাড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। এ পর্যন্ত এটি ৮০টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে, এতে অর্থায়নের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলার। ব্যাংকটির বিশেষত্ব হচ্ছে- পর্যায়ক্রমে মার্কিন ডলার এর একচ্ছত্র আধিপত্য থেকে বেরিয়ে আসা। সদস্য দেশগুলোকে প্রদত্ত ঋণের অন্তত ৩০ শতাংশ স্থানীয় মুদ্রায় দেয়ার অঙ্গিকার। কারণ ডলারের উপর নির্ভরতা কমানোই মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া মুদ্রার বিনিময় হারের উঠানামার নেতিবাচক প্রভাব থেকে সদস্য দেশগুলোকে রক্ষা করা। যাইহোক, বিগত ১৩-১৬ জুন ২০২৩ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সম্মেলনে সুইজারল্যান্ড সফরকালে অনুষ্ঠানের সাইড লাইনে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট মাতামেলা সিরিল রামাফোসার সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন। যেথায় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আগস্ট ২০২৩ এ অনুষ্ঠিতব্য ব্রিকস সম্মেলনে বাংলাদেশকে সদস্য পদ দেয়ার আশ্বাস দেন। ব্রিকসভুক্ত ৫টি রাষ্ট্রই জি-২০ এর সদস্য। ব্রিকস মূলতঃ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর বৃহত্তম অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক একটি জোট। জোটভুক্ত এ ৫টি দেশের বৈশ্বিক জিডিপিতে অবদান বিশ্বের ধনী জোট হিসেবে খ্যাত জি-৭ভুক্ত দেশগুলোর থেকেও অপেক্ষাকৃত বেশি। এটি ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জিডিপিতে ৫০ শতাংশের অধিক অবদান রাখবে। আর ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করবে বলে মনে করেন অনেক বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ। এছাড়াও
আন্তর্জাতিকভাবে খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে ব্রিকসভুক্ত দেশসমূহের। বলা যায়- ব্রাজিল শস্য সরবরাহে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। এছাড়া সয়াবিন উৎপাদক ও সরবরাহকারী হিসেবে সর্বাপেক্ষা অগ্রগামী বলে যার রয়েছে সুখ্যাতি। গম রপ্তানিকারক হিসেবে রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম দেশ। অপরদিকে চাল রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে শীর্ষে অবস্থান করছে ভারত। এছাড়াও আন্তর্জাতিক এনার্জি মার্কেটে চীন, রাশিয়া ও ভারতের প্রভাবকে অস্বীকার করার জো নেই। শুধু তাই নয়-অভ্যন্তরীণ বিবিধ বিরোধ- বিসম্বাদ মীমাংসার ক্ষেত্রেও এ জোটের বহুমাত্রিক দৃশ্যমান ভূমিকা রয়েছে। যেমন- হিমালয় সিমান্তবর্তী ভারত-চীন বিরোধে উত্তেজনা প্রশমনে এ জোট সাফল্য দেখিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার তিক্ত সম্পর্কের অবসানকল্পে পারস্পরিক অর্থবহ সমঝোতার মাধ্যমে চীন মধ্যপ্রাচ্যে একটি কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। উল্লেখ্য যে, বিগত প্রায় আড়াই বছর গোটা বিশ্ব করোনা ভাইরাস নামক এক অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। যার অশুভ শিকারে পরিণত হয়ে দলিতমথিত হয়ে যায় তাবৎ দুনিয়া। মুখ থুবড়ে পড়ে বিশ্ব অর্থনীতি। যা থেকে উত্তরণে প্রত্যেকটি দেশ বিবিধ প্রয়াস- প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। তবে এক্ষেত্রে কেউ সাফল্যর নাগাল পেলেও আবার অনেকেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। অপরদিকে কেউ কেউ অভিশপ্ত দেউলিয়াত্বকে বরণ করতে বাধ্য হয়। অতঃপর শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। পূনরায় মহা এক সংকটে নিপতিত হয় বিশ্ব। যার অশুভ প্রভাবে দুনিয়া জুড়ে দৃশ্যমান হয় মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক চোখ রাঙানি। সংকট ফেইস করতে কৃচ্ছ্রতা সাধন নীতি অবলম্বন করছে বিভিন্ন দেশ। এমনিতর সংকটময় পরিস্থিতিতে একলা চলো নীতি পরিহার করে জোটবদ্ধ হয়ে চলার দিকেই ঝুঁকছে প্রায় সকলেই। ‘ব্রিকস’ গ্রুপটি এখনো নতুন হলেও কিন্তু এটি ইতোমধ্যেই এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। জোটভুক্ত দেশসমূহের আন্তর্জাতিক প্রধানতম বিষয়গুলোতে তাদের নীতিগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করতে সক্ষম হয়েছে। উপরন্তু একটি বহুমাত্রিক বিশ্বব্যবস্থা গঠন এবং বিশ্ব বাণিজ্যব্যবস্থার আধুনিক মডেল তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে বলে এমনটি উল্লেখ করেন রুশ প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন। ব্রিকসভুক্ত দেশসমূহ বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নে সক্রিয় অবদান রাখছে। এসব দেশসমূহের সম্মিলিত জনসংখ্যা ৩.৩৩ বিলিয়ন। যা গোটা বিশ্ব জনসংখ্যার তুলনায় অপেক্ষাকৃত ৪০ শতাংশের অধিক। পৃথিবীর ভূমির ২৬ শতাংশই তাদের। উপরন্তু বিশ্বব্যাপী আভ্যন্তরীন উৎপাদনের মোট (জিডিপি) ২৫ শতাংশ ও বিশ্ব বাণিজ্যের ২০ শতাংশের অংশীদার তারা। প্রারম্ভিক পর্যায় থেকে এটির অংশীদারী ও অব্যাহত সহযোগিতার মাধ্যমে ব্রিকস তাবৎ বিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রীকরণের প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে একটি আশাজাগানিয়া প্রভাব সৃষ্টি করেছে। এটি অনস্বীকার্য যে, এ জোটের অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহ বর্তমান বিশ্বে দ্রুত বর্ধনশীল বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। যারা সম্মিলিতভাবে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে ছড়ি ঘুরাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ মহল। যৎকারণে ব্রিকসের পার্টনার হতে আগ্রহী বিবিধ উন্নয়নশীল দেশ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশসহ আরও ২৫টি দেশ এ জোটের অন্তর্ভুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তন্মধ্যে রয়েছে- ইরান, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, আর্জেন্টিনা, আলজেরিয়া, বাহরাইন, জিম্বাবুয়ে, উরুগুয়ে, মিশর, ভেনিজুয়েলা, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, বেলারুস, নিকারাগুয়া, সিরিয়া, কাজাকিস্তান, সুদান, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, সেনেগাল ও তিউনিসিয়া । ব্রিকসে বাংলাদেশের যোগদান সম্পর্কে নানা মুনির নানা মত পরিলক্ষিত হচ্ছে। কেউ বলছেন- বাংলাদেশ এর সাথে বৈদেশিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে ব্রিকস। কেননা এ জোটটি যেখানে আমেরিকা ও তাদের ডলারের আধিপত্য নিয়ন্ত্রনে কাজ করছে, সেখানে বাংলাদেশও দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা পাবে। এছাড়া যেহেতু বাংলাদেশ তার মোট আমদানির প্রায় ৪০ শতাংশই ব্রিকসভুক্ত চীন ও ভারত থেকেই করে থাকে। সেহেতু ব্রিকস থেকে বিকল্প মুদ্রা চালু হলে বাংলাদেশ এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে না। আর ব্রিকস হচ্ছে পাশ্চাত্যের প্রভাবমুক্ত একটি জোট। উল্লেখ্য যে, বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক হচ্ছে বিশ্বব্যাংক আইএমএফ। যেথায় উন্নয়নশীল দেশসমূহ অনেকটা মূল্যহীন থাকে বিধায় তাদের যাবতীয় অসম নীতি বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিতে হয়। এক্ষেত্রে ব্রিকস একমাত্র উন্নয়নশীল দেশেরই প্রতিনিধিত্ব করে। যেথায় কারও দাদাগিরীর কোনপ্রকার সুযোগ থাকবে না। বরং সেখানে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের স্বার্থই অগ্রাধিকার পাবে। অপরদিকে ব্রিকসভুক্ত রাষ্ট্র চীন এবং ভারতের মধ্যকার বিরোধ প্রসঙ্গটি টেনে এনে ব্রিকসের জন্য এটি শুভফলদায়ক নয় বলেও মনে করেন অনেকেই। একদিকে চীনের অর্থনীতি অগ্রসরমান থাকলেও অপরদিকে অর্থনৈতিক মন্দায় কবলিত ব্রাজিল। আর ভারতকে বর্তমানে অভ্যন্তরীন বিবিধ সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ফলে তাদের অর্থনীতিও আশাব্যাঞ্জক বলা যাবে না। এছাড়া পশ্চিমাদের নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার পূর্বাবস্থায় ছন্দপতন ঘটেছে। এতে ব্রিকস চীন কর্তৃক প্রভাবিত হওয়ার আশংকাকেও উড়িয়ে দেয়া যায় না। এমনিতর পরিস্থিতিতে ব্রিকসের পথচলা কুসুমাস্তীর্ণ নয় বলেও মন্তব্য করেন অনেকেই। অনস্বীকার্য বাস্তবতা হলো- ব্রিকসভুক্ত ৫টি দেশে তুলনামুলক বিবেচনায় বাংলাদেশ এর রপ্তানীর চেয়ে অপেক্ষাকৃত আমদানি বেশী। ২০২১-২২ সালে আমদানির পরিমান ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলার এবং রপ্তানির পরিমান ছিল কেবলমাত্র ৪ বিলিয়ন ডলার। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানী করা হয় এর চেয়ে ৪গুন বেশী। আর ইইউ এর দেশসমূহে এর চেয়ে ৭ গুন অধিক রপ্তানি করা হয়ে থাকে। সুতরাং যেক্ষেত্রে আমদানি রপ্তানির চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশী সেক্ষেত্রে ব্রিকস থেকে সুবিধা পাওয়া কঠিন হতে পারে। যাইহোক, বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার গতি-প্রকৃতিতে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এহেন অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে চলার নীতি অনুসরণ করছে প্রায় সকল দেশ। বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলো নিজস্ব অবস্থানকে অধিকতর সুসংহত করতে বিবিধ উদ্যোগ -আয়োজন গ্রহণ করছে। সবাই বিকল্প মূদ্রার সন্ধান করছে। টেকসই বাণিজ্যিক ব্যবস্থার দিকে এগুতে চাচ্ছে। যে ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেরও ব্রিকস জোটে অন্তর্ভুক্তির স্বাভাবিকতাকে অস্বীকার করা যায় না। উপরন্তু ব্রিক্সে যোগ দেয়া নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক যুক্তিও উপস্থাপন করেছেন। যেমন- আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একক কারও উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমানো, অপরাপর দেশের সাথেও যাতে অর্থ বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় যাতে সহজলভ্য হয়। এমনকি ডলারের উপর থেকে নির্ভরতা কমাতেও আগ্রহী তিনি। তবে এক্ষেত্রে মার্কিনীদের বিরাগভাজন হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। কেননা ডলারের আধিপত্যে কোনপ্রকার আঘাত আসুক, তা তারা মেনে নিবে বলে মনে হয়না। ব্রিকসভুক্ত দেশসমূহ যেহেতু জি-৭ এর বিপরীতে, সেহেতু এ জোটে বাংলাদেশ এর অন্তর্ভুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে এমনটি ধারনা করা যায় না। এছাড়া পোষাকশিল্প রপ্তানির অন্যতম প্রধান ক্রেতা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে চীন ও রাশিয়ার দিকে বাংলাদেশ এর ঝুঁকে পড়াটা পোষাক শিল্প রপ্তানিতে ব্যত্যয় সৃষ্টি হতে পারে বলেও শংকা প্রকাশ করেন বিদগ্ধ মহল। এটি কোনভাবেই বিস্মৃত হবার নয় যে, হালসময়ে বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতি এককভাবেই পাশ্চাত্যদের কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। যার বিপরীতে গিয়ে বিকল্প সৃষ্টি বিশাল চ্যালেঞ্জিং।এক্ষেত্রে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এগুতে হবে নতুন এ জোটকে। এতে যদি কোনপ্রকার ব্যত্যয় ঘটে, তাহলে ফলাফল ভিন্নও হতে পারে। পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যাতে ব্যবচ্ছেদ না ঘটে, তজ্জন্য অতীব সতর্ক দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয়। অপরদিকে ব্রিকস সংশ্লিষ্ট সদস্য রাষ্ট্রের কেউ যাতে কোনরূপ অবাঞ্ছিত প্রভাব সৃষ্টি করতে না পারে এ ব্যাপারেও সূক্ষ্ম নজরদারি আবশ্যক।
গত ২৭ জুলাই ২০২৩ ইং দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায় আমার প্রকাশিত কলাম।
[related_post themes="flat" id="1988"]