ইসরাইলের সাথে আরব আমিরাত-বাহরাইনের মধ্যকার চুক্তি কার স্বার্থে ?-ইব্রাহীম আখতারি
সম্প্রতি তাবৎ মুসলিম দুনিয়াকে হতবাক করে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সাথে আরব আমিরাত-বাহরাইনের মধ্যকার একটি অসম চুক্তি সম্পাদিত হয়। যে চুক্তির কারণে মুসলিম কমিউনিটির সর্বত্র বিরাজ করছে অসন্তোষ। ক্রমাগত জন্ম দিচ্ছে বিবিধ প্রশ্ন। কেন এ চুক্তি? কার স্বার্থে এ চুক্তি? কি রয়েছে এই চুক্তির অন্তরালে? ইত্যাকার নানান বিষয়। বিস্মিত না হয়ে পারি না! অত্যন্ত নাতিদীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের মত মুসলিম অধ্যুষিত দেশ কেনই বা ভুলে গেল- ফিলিস্তিনি মুসলমানদের উপর বর্বর ইসরাইলীদের নির্মমতা-নৃশংসতা ও সহিংসতার বিভৎস চিত্র। যেখানে ফিলিস্তিনে এখনও রক্তের দাগ শুকায়নি। এখনও অব্যাহত রয়েছে পিতৃ-মাতৃহীন অবোধ শিশুর গগণবিদারী আর্ত চিৎকার। এখনও ঝর্ণাধারার ন্যায় ঝরছে স্বামীহারা বিধবা স্ত্রীর চোখের জল। এখনও বুলেটবিদ্ধ শরীর নিয়ে অনেকেই ডানা ভাঙ্গা পাখির ন্যায় কাতরাচ্ছে। অর্ধাঙ্গ-বিকলাঙ্গ হয়ে অনেকেই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। সেখানে শর্তহীন এ চুক্তি কি কখনও আরব বিশ্ব তথা ফিলিস্তিনে শুভ ফল বয়ে আনতে পারবে ? কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। কেননা এরা তো কখনও ফিলিস্তিনীদের নিরাপত্তা ও অধিকার এর প্রশ্নে ইতিবাচক মনোবৃত্তি পোষন করে না। যার উজ্জল দৃষ্টান্ত হচ্ছে- মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক এক স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তে অবৈধভাবে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান। এখানে উল্লেখ্য যে, ফিলিস্তিন স্বাধীনতার প্রশ্নে দ্বি রাষ্ট্রকেন্দ্রিক সমাধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি অনেক আগের। যে ভিত্তিতেই মার্কিনীরা মধ্যস্থতাকারীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। এ ধারাবাহিকতায় 1978 সালে ক্যাম্প ডেভিডে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মধ্যস্থতায় মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত এবং ইসরাইল প্রধানমন্ত্রী মেনাচিম বেগিনের মধ্যকার প্রথম সমঝোতা এবং 1979 সালে শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়। 1993 সালে মার্কিন মধ্যস্থতায় পিএলও-ইসরাইলের মধ্যে অসলো অ্যাকর্ড, 1994 সালে মার্কিন মধ্যস্থতায় জর্ডান-ইসরাইল শান্তিচুক্তি এবং 2000 সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের মধ্যস্থতায় পূনরায় পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত এবং ইসরাইল প্রধানমন্ত্রী এহুত বারাকের মধ্যে শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়। কিন্তু এসব চুক্তির ফলাফল ছিল অন্তঃসারশুন্য। এসব চুক্তি ফিলিস্তিনি জনগণকে কোন সুরক্ষা দিতে পারে নি। এখনও ফিলিস্তিনে ইসরাইলী আগ্রাসন বন্ধ হয়নি। দৃশ্যমান এসব দৃষ্টান্ত বিদ্যমান থাকার পরও কেন এ চুক্তি ? এ চুক্তি কি ফিলিস্তিনি মুসলমানদের স্বার্থ স্বপক্ষীয়, নাকি পশ্চিমাদের মনোরঞ্জন। সত্যিকার অর্থে সউদী আরব, ইরাণ ও তুরস্কের মত অধিকাংশ আরব রাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে বিচ্ছিন্ন দু একটি রাষ্ট্রের সাথে সমঝোতা প্রহসন বৈ আর কিছুই নয়। অনস্বীকার্য বাস্তবতা হলো, ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতা, মসজিদুল আকসার দখলমুক্তিই একমাত্র আরববিশ্বে শান্তি নিশ্চিত হতে পারে। এর অন্যথা হলে যে কোন চুক্তিই মুসলমানদের মধ্যে বিরোধ-বিসম্বাদ বৃদ্ধি পাবে। এহেন আশংকাকে কোনভাবেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যায় না। ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য দাবিকে পাশ কাটিয়ে কোনপ্রকার সমঝোতা বা একতরফা চুক্তি বিশ্ব মুসলিমের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। অত্যন্ত দূঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলতে হয়,- বিশ্ব পরিমন্ডলে মুসলমানরা বৃহত্তর একটি জনগোষ্ঠির স্থান দখল করে থাকলেও সর্বত্র এরা নিগূহীত-নির্যাতিত। যার অন্যতম কারণ হচ্ছে ইসলামের শ্বাশত আদর্শ থেকে বিচ্যুতি, পদলেহী চরিত্র, সত্যিকার ঈমানী চেতনার অবলুপ্তি, তথা পারস্পরিক বিভাজন ও অনৈক্য। অতএব যে কোন মূল্যে মুসলমানদের এসব অনাকাঙ্খিত বিষয়াদির অক্টোপাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় এর চেয়ে আরও কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
অধ্যক্ষ এম ইব্রাহীম আখতারী
লেখক ও গবেষক
সূত্রঃ ২৬ এপ্রিল ২০২১ইং, সাপ্তাহিক আবেদন পত্রিকা।
[related_post themes="flat" id="1594"]