স্মরণীয় রমাদ্বানঃ ৫ রমজান–কলামিস্ট মুহাম্মদ শাহীদ রিজভী
১৩৪২ হিজরীর রমদ্বানের ৫ম দিনে, যা ১৯২৩ সালের ২৩ শে এপ্রিল, টোব্রুকের প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে লিবিয়ান ও ইতালীয় উপনিবেশিক বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।
আসাদ আল সাহারা Lion of the Desert (أسد الصحراء) বা “মরুভূমির সিংহ” নামে খ্যাত
ওমর মুখতার মিশর থেকে ফিরে এসে লিবিয়ার সীমানা অতিক্রম করার সময় এ যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ইতালির সাতটি সাঁজোয়া যান লিবিয়ার যোদ্ধাদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে তাকে এমবুশ করে।
ইতালিয়ান বাহিনী মুখতারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলো এবং বিপ্লব দমন করতে তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। মুখতার লিবিয়ায় প্রবেশ করার সাথে সাথে তারা তার ও তার সহযোগীদের উপর গুলি চালিয়ে তাদের ঘেরাও করে ফেলে, কিন্তু মুখতার ও তাঁর সহযোদ্ধারা তাদের উপর পাল্টা গুলি চালানোর মধ্য দিয়ে অসম যুদ্ধ শুরু করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি ব্যতীত সমস্ত যানবাহন পুড়ে যায়। যাতে করে ওমর মুখতার ও তাঁর সহযোদ্ধারা যুদ্ধস্থল থেকে সরে যেতে সক্ষম হন। এটি ছিলো ইতালীয় উপনিবেশবাদীদের মুখে এক চরম চপেটাঘাত। উল্লেখ্য পরবর্তীতে ১৯৩১ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর এক প্রহসনের সংক্ষিপ্ত বিচারের মাধ্যমে ৭০ বছর বয়সী ওমর আল মুখতারকে ইতালীয়রা প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শহীদ করে। এর মাধ্যমে ইতালীয় উপনিবেশবাদীদের বিরুদ্ধে ১৯১১ সালে সূচিত ওমর আল মুখতারের বিশ বছরব্যাপী ওমর আল মুখতার এর সংগ্রামের করুণ সমাপ্তি ঘটে। তৎপরবর্তীতে ওমর আল মুখতারকে মুসলিম উম্মাহ ‘শাইখ-আল-শাহীদ’ উপাধিতে ভূষিত করে।
ওমর আল মুখতার ছিলেন আশআরী মতাদর্শের সুন্নী ও মালিকি মাজহাব অনুসারী এক সেনুসী মুজাহিদ। আরব ও উত্তর আফ্রিকাজুড়ে এক সংস্কার ও ইসলামী পুনর্জাগরণমূলক আন্দোলন ছিলো ‘সেনুসী আন্দোলন’। ১৮৩৭ সালে মক্কায় বসবাসকারী আলজেরীয় আলেম ও সুফি সাইয়েদ মুহাম্মদ ইবনে আলী আল-সেনুসী এই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা করেন।
ওমর আল-মুখতার আজ নেই। কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর কথা ও কাজ, তাঁর স্বপ্নের লিবিয়া। আদালতে ও ফাঁসির কাষ্ঠে দাঁড়িয়ে দৃপ্তকণ্ঠে বলা তাঁর বক্তব্য আজও নাড়া দেয় লাখো মুসলিম যুবকের অন্তর—
“আমরা মুসলমান। আমরা বিজয় অর্জন করি কিংবা শাহাদাত বরণ করি। আত্মসমর্পণ কী, তা আমাদের জানা নেই। আমাকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে, কিন্তু মনে রেখ, আমার হত্যাকারীর চেয়ে আমার জীবন বড় ছিলো।”
——-____——-____——-____——-
* ১৩৬৭ হিজরির ৫ম রমদ্বানের দিন যা ১৯৪৮ সালের ১১ জুলাই ছিলো, মোশে দায়নের নেতৃত্বে একটি ইস্রায়েলি কমান্ডো ইউনিট ফিলিস্তিনের শহর লিডায় একটি গণহত্যা চালায়।
ইস্রায়েলীয়রা ‘অপারেশন দানি” নামে এ অভিযান চালিয়েছিল। ইস্রায়েলি বিমান বাহিনী লিড্ডা এবং রামাল্লা আক্রমণ করে এবং ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ৬০ ইস্রায়েলীয়কে হত্যা করে পাল্টা লড়াই করেছিল। ইস্রায়েলিরা তাদের উপর পুনরায় আক্রমণ শুরু করে এবং ৪২৬ জন আরবকে শহীদ করে।
************************
মুহাম্মদ শাহীদ রিজভী।
আইনজীবী ও সমাজকর্মী,
৫ রমাদ্বান, ১৪৪২ হিজরী,
৫ বৈশাখ, ১৪২৮ বাংলা,
১৮ এপ্রিল, ২০২১ ঈসায়ী,
রবিবার, ঢাকা।
——————————————
বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও উইকিপিডিয়া অবলম্বনে ইংরেজি থেকে অনূদিত ও সংকলিত।
ইনসেটেঃ শাইখ-আশ-শাহীদ, ওমর আল মুখতার (রহঃ) এর ছবি।
[related_post themes="flat" id="1587"]