খবরের বিস্তারিত...


শায়খুল হাদীস অধ্যক্ষ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শীদের মাঝে বহুল সমাদৃত ব্যক্তিত্ব হলেন শায়খুল হাদীস অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মাদ জয়নুল আবেদীন জুবাইর। পিতা মরহুম আলহাজ্ব গোলাম মোস্তফা এবং মাতা মরহুমা আনোয়ারা বেগমের ৫ছেলে ও ৫ মেয়ের মধ্যে তৃতীয় সন্তান তিনি। ১৯৬০ইং সনের ১লা মার্চ লক্ষীপুর জেলার সদর থানার অন্তর্গত মুসলিমাবাদ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম হয় তাঁর। পিতা-মাতার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ৫ভাই ৫বোনের সকলেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত।

আল্লামা জুবাইরের প্রাথমিক শিক্ষার্জন শুরু হয় তাঁর নিজের গ্রামেই। জেমস ফিনলে এন্ড কোম্পানীতে পিতার চাকুরির সুবাদে এক সময় পরিবারের সাথে তিনি চট্টগ্রাম চলে আসেন। ১৯৬৬সালে রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরিকত মুরশিদে বরহক আওলাদে রাসুল (দ:) হাফেজ ছৈয়দ আহমদ শাহ ছিরিকোটি (রহঃ) প্রতিষ্ঠিত পাঁচলাইশ ষোলশহরস্থ ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া মাদরাসায় জামাতে দাহুমে ভর্তি জীবনের বারটি বছর তাঁর এই প্রিয় প্রতিষ্ঠানে কাটিয়ে দেন মাওলানা জুবাইর। ১৯৭৮সালে স্কলারশিপসহ কামিল (হাদিছ) পরিক্ষায় তিনি কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষায় উত্তীর্ণের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেনারেল হিস্ট্রিতে বি.এ. (অনার্স) সহ মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।

কর্মজীবনের শুরুতে ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহ:) প্রতিষ্ঠিত জামেয়া অদুদীয়া সুন্নীয়া মাদরাসায় আরবী প্রভাষক পদে যোগদান করে ১৯৮৮ ইং সন পর্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। মাঝখানে এক বছর তিনি আঞ্জুমানে রহমানীয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া পরিচালনাধীন হালিশহর তৈয়্যবীয়া ইসলামীয়া সুন্নীয়া মাদরাসায় সুপারিন্টেনডেন্ট ছিলেন। ১৯৮৯ইং সনে চট্টগ্রাম নেছারিয়া কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস পদে যোগদান করেন। ২০১১ ইং সনে তিনি প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ পদে যোগদান করে ২০২০ সাল অবধি সফলভাবে দায়িত্ব পালন করার পর অবসর নেন। এছাড়াও আল্লামা জুবাইর সাহেব চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আগ্রাবাদ সি.ডি.এ. আ/এ জামে মসজিদের খতিব হিসেবে ১৯৮৫ সন থেকে এ পর্যন্ত খেদমত করে যাচ্ছেন।

১৯৯৫ইং সনে প্রথম বারের মত হজ্জে বায়তুল্লাহ ও জিয়ারতে মদীনা মুনাওয়ারার সৌভাগ্যও নসীব হয় তাঁর। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সেমিনারে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বক্তব্য রাখার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন। একপর্যায়ে তিনি তরীকায়ে কাদেরীয়া আলীয়ার মহান ধারক, আওলাদে রাসুল (দ:), রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরিকত, পীরে কামেল হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ তাহের শাহ (মা.জ.আ.)’র হাতে বাইয়াত গ্রহন কর আধ্যাত্মিকতার সুবিশাল সম্রাজ্যে প্রবিষ্ট হন।

বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সেবামুলক প্রতিষ্ঠানের সাথে তাঁর সম্পৃক্ততা লক্ষ্যনীয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, আল্লামা জুবাইর সাহেব চট্টগ্রাম মা-শিশু জেনারেল হসপিটালের আজীবন সদস্য। তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৮৯ সালে ইসলামী যুবসেনায় যোগদানের মধ্য দিয়ে। এরপর ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম মহানগরী ইসলামী ফ্রন্ট সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে নিয়োগ পান আল্লামা জুবাইর সাহেব। একই বছর কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির সদস্য পদ লাভ করেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রথম কেন্দ্রীয় সদস্য সচিবের দায়িত্বও অর্পিত হয় তাঁর উপর। সংগঠনের দায়িত্বের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ প্রয়াস, একনিষ্ঠতা, একাগ্রতা ওকর্মদক্ষতার গুণে ২০০০ সাল নাগাদ দশ-দশটি বছর সর্বক্ষেত্রে, সব পর্যায়ে সংগঠনের প্রচার-প্রসার ও পরিব্যাপ্তিতে প্রভূত অবদান রাখেন তিনি। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব অর্পিত হয় তাঁর উপর। ২০০২ সালে সংগঠনের মধ্যবর্তী কাউন্সিলে তিনি যুগ্ম মহাসচিব নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে সংগঠনের নাম ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ -এ রূপান্তরিত হলে তিনি কেন্দ্রীয় মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। সুন্নীয়তের ব্যাপকতর রাজনৈতিক উত্থানে সুসংঘবদ্ধ আন্দোলনকে গণমনে ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে আল্লামা জুবাইর সাহেবের অবদান অবিস্মরণীয়। সদালাপী, সহনশীল, পরমতসহিষ্ণু, রুচিশীল এবং মানোত্তীর্ণ এক সংগঠক হিসেবে সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মাঝে তিনি দারুণভাবে সমাদৃত। দলমত নির্বিশেষে এ দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে একজন সফল, নন্দিত, জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ও সংগঠক হিসেবে তাদের আন্তরিক ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনি। বিশেষত যুগোপযোগী, বাস্তবসম্মত এবং তথ্য ও তত্ত্ব সমৃদ্ধ প্রাঞ্জল ভাষার সাবলীল বক্তৃতা তাঁকে বাংলাদেশে সুন্নীয়তের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অনলবর্ষী বক্তা ও বাগ্মী নেতা হিসেবে সুখ্যাতি দিয়েছে।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মাওলানা জুবাইর সাহেব তাঁর ক্ষুরধার লেখনী দিয়ে সুন্নীয়তের প্রকাশনা জগতকেও দারুনভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর গবেষণাধর্মী অসংখ্য প্রবন্ধ, সুন্নীয়তের আকিদাগত বিষয়ের উপর প্রণীত ও অনুদিত বই পুস্তক, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে লেখা নিবন্ধ, সর্বোপরি সংগঠনের বিভিন্ন স্তরেরনেতা-কর্মীদের জন্য প্রণীত আন্দোলনের সহায়ক একাধিক পুস্তিকা দলমত নির্বিশেষেসর্বস্তরের মানুষকে সত্যের পথে জোরালো ভাবে আহবান করে। তাঁর লিখিত ও অনুদিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে “আদ-দৌলাতুল মক্কিয়্যাহ বিল মাদ্দাতিল গাইবিয়্যাহ”, “নুরুল মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা”, “শরীয়াতের আলোকে জশনে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা “, “শানে হাবীবুর রহমান। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা “, “শরীয়ত ও তরীক্বত “, “সুন্নীয়ত প্রতিষ্ঠায় সংগঠন “, “ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের বৈশিষ্ট্য “, “কর্মী সংগ্রহ পদ্ধতি “, “রাজনীতি ও আমাদের দায়িত্ব “, “হারামাঈনের পথে (হজ্ব নির্দেশিকা)”, “আযানের আগে সালাত -সালাম(একটি শরয়ী পর্যালোচনা)” ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

দেশ, জাতি ও মাজহাব-মিল্লাতের কল্যা সাধনে এবং গোটা জাতির খেদমতে তাঁর আন্তরিক প্রয়াস আজো অব্যাহত আছে। আর এই কাঙ্খিত পথেই আল্লাহ তাঁর হায়াত দারাজ করুক। আমীন, বেহুরমতি সায়্যিদিল মুরছালীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা।

[related_post themes="flat" id="1544"]