শিক্ষা আইন-২০১৬ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ঈমান-আকীদা-মুল্যবোধের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ চেয়ারম্যান জননেতা আল্লামা সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী অবিলম্বে শিক্ষা নীতি-২০১০, শিক্ষা আইন-২০১৬ ও প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত চলমান পাঠক্রম সংশোধন করার দাবি জানিয়ে বলেছেন, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ ও শিক্ষা আইন-২০১৬ এর অধীনে প্রণীত সিলেবাসে বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্য বই থেকে মহানবীর জীবনচরিতসহ মুসলিম লেখকদের ইসলামী ভাবাদর্শ সম্বলিত গল্প, রচনা ও কবিতা তথা মুসলিম মনিষি ও পন্ডিতদের জীবনালেখ্যকে পরিবর্তন করে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী এমনিতর কতিপয় বিষয় সংযোজিত করা হয়েছে, যা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ইমান-আকীদা ও ইসলামী মুলবোধের সাথে কোনভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়। বরঞ্চ বর্তমান পাঠ্যক্রমে শিক্ষার্থীদের ইসলামী শিক্ষার প্রতি অধিকতর উদাসীনতা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। এ শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইনের মাধ্যমে পাঠ্যক্রমে সুর্দীঘকাল থেকে প্রচলিত ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্বহীন করে তোলার মাধ্যমে নাস্তিক্যবাদী নীল নক্সা বাস্তবায়নের চরম ধৃষ্ঠতা ও প্রদর্শিত হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশী জাতিসত্তার মর্মমূলে ধর্মীয় প্রভাব দৃশ্যমান হলেও এ শিক্ষানীতিতে তা চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। এ কথা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই যে, তাবৎ দুনিয়ার ভূখন্ডগত পরিচিতির মর্মমূলে রয়েছে ধর্ম। তাই জাতিসত্তার অন্যতম ভিত্তি হিসেবে ধর্মশিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েই রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরো বলেন, ধর্মীয় মূল্যবোধের অনুশীলন ও চর্চার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থী চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্যের উৎকর্ষতা সাধন এর পাশাপাশি খাঁটি ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এ কারণেই বিশ্বের দেশে দেশে ধর্মীয় শিক্ষার আলোকেই শিক্ষানীতি প্রনীত হয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষা আহরণের জন্য পৃথক স্কুল, কলেজ ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন একটি ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় খ্রীষ্ঠান ও ইহুদী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। জার্মান ও গ্রীসে অদ্যবধি অর্থডক্স ও খ্রীষ্টধর্ম শিক্ষা চালু আছে। কানাডায় ক্যাথলিক শিক্ষার জন্য বার্ষিক বাজেটে বার্ধতামূলক বরাদ্দের প্রতিশন রয়েছে। রাশিয়া ও চীনেও ধর্মভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্র মুসলিম ভিত্তি নিয়েই টিকে আছে। ভারতের স্বাধীনতা পরবর্তী ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষা বাস্তবায়নে উদ্যোগ দেয়া হলেও কালক্রমে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তুরস্ক ধর্মভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কামাল আতাতুর্কের সর্বপ্রকার ষড়যন্ত্র ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এছাড়াও সৌদি আরব সহ সকল মুসলিম অধ্যুষিত দেশে কোন না কোনভাবে ইসলামী শিক্ষা চালু রয়েছে। তাই শিক্ষানীতি ২০১৬’ তে সংযোজিত ইসলামী ভাবাদর্শ বিরোধী বিষয়সমূহ বাতিল করে অবিলম্বে দেশের খ্যাতিনামা শিক্ষাবিদ, ইসলামী স্কলার তথা বিশেষজ্ঞদের সমন্বিত মতামতের ভিত্তিতে শিক্ষানীতি ২০১৬ইং পূর্ণ প্রণয়নের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি। “জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ ও শিক্ষা আইন-২০১৬’তে নাস্তিক্যবাদী ধারা সংযোজনঃ প্রেক্ষিত ধর্ম ও নৈতিকতা বিদ্বেষী পাঠ্যক্রম” শীর্ষক ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উদ্যোগে অদ্য ২০ জুন ২০১৬ ইং রোজ সোমবার বিকেল তিনটায় জাতীয় প্রেস ক্লাব বলরুমে অনুষ্ঠিত এক সেমিনার ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর সভাপতি আল্লামা খাজা আরিফুর রহমান তাহেরী সভাপতির বক্তব্যে বলেন, জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেনীর পাঠ্যপুস্তক সমূহ থেকে নৈতিকতা ও ধর্মীয় ঐতিহ্যবাহী গল্প, কবিতা ও পাঠ্য বাদ দিয়ে নাস্তিক্যবাদী ভাবধারার বিভিন্ন লিখনী সন্নিবেশিত করে কর্তৃপক্ষ ধর্মীয় বিদ্বেষ উসকে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের আগামী প্রজন্ম কে ইসলাম থেকে দূরে রাখার জন্য ইসলামের শত্রুরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি মাদ্রাসাগুলোকে পর্যন্ত ইসলাম শূন্য করার পাঁয়তারা করছে।
আল্লামা মোশাররফ হোসাইন হেলালী বলেন, ইসলাম বিদ্বেষীদের ছোবলে আক্রান্ত আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতি, যা এখন জাতীয় শিক্ষা আইনে রুপ দেয়া হচ্ছে। অবিলম্বে এই চক্রান্ত পরিহার করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী পীর-ওলামা ও সুফিবাদী শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবিদের সমন্বয়ে নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা আইন ও কারিকুলাম বাতিল করে ধর্ম ও নৈতিকতা ভিত্তিক সিলেবাস ও কারিকুলাম চালু করতে হবে।
প্রফেসর ডঃ আতাউর রহমান মিয়াজী বলেন, সংশ্লিষ্ট সকলের এ বিষয়ে অনুধাবন করা উচিত যে, ধর্ম ও নৈতিক অনুভূতি আর জঙ্গিবাদ বা উগ্রপন্থা এক নয়। ধর্ম ও নৈতিকতার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত রয়েছে একথা না বুঝতে পারাটা হবে জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক পরাজয়। বরঞ্চ ধর্ম ও নৈতিকতা হীন শিক্ষা আগামী প্রজন্মকে অবক্ষয়ের করালগ্রাসে নিক্ষেপ করবে। তাই জঙ্গিবাদ দমন করতে হলে জাতিকে ধর্ম ও নৈতিকতার প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে হবে।
উদ্বোধকের বক্তব্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর আল্লামা শায়খ খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী বলেন, সত্তুরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী আইন না করার অঙ্গীকার করেছেন। যার ধারাবাহিকতায় জননেত্রী শেখ হাসিনা ধর্মীয় খাতকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যাপক কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। অথচ দুঃখজনক হলো গুটিকয়েক ধর্মবিদ্বেষী ও নাস্তিকরা আওয়ামী লীগ এর উদারতাকে ব্যবহার করে সরকারকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করতে ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা নাস্তিকদের বিরুদ্ধে তাঁর দলীয় ও ব্যক্তিগত অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। ইনশা আল্লাহ, শিক্ষা আইন ও পাঠ্যক্রম নিয়ে ধর্মীয় জ্ঞানীদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
সেমিনারের উদ্বোন করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর আল্লামা শায়খ খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান আল্লামা সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী। এছারাও এতে আরও আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ডঃ প্রফেসর আতাউর রহমান মিয়াজী, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ-এর যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মোশাররফ হোসাইন হেলালী, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, টাঙ্গাইল মধুপুর দরবার শরীফের পীরসাহেব আল্লামা আবু হানিফ মধুপুরী,মগবাজার হামিদিয়া দরবার শরীফের পীরসাহেব আল্লামা হাবিব উল্লাহ বাগদাদী আল ক্বাদেরী, বদরপুর দরবার শরীফের সাজ্জাদানিশিন পীরসাহেব আল্লামা সাইয়িদ আরিফ বিল্লাহ রাব্বানী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগপ্রভাষক মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ, মুফতী আমীমুল ইহসান একাডেমীর পরিচালক সাইয়্যেদ নাঈমুল ইহসান বারাকাতী,ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় পরিষদের অর্থ সম্পাদক এডভোকেট শাহীদ রিজভী, ইসলামী ছাত্রসেনা কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি এম মনির হোসাইন,সিনিয়র সহ-সভাপতি নাঈম উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদককফিল উদ্দীন রানা প্রমুখ।