‘বিতর্কিত শিক্ষানীতি ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতা মানবে না’- অধ্যক্ষ আল্লামা জুবাইর
বিতর্কিত শিক্ষা নীতি ২০১০ এবং শিক্ষা আইন ২০১৬ বাতিলের দাবিতে ফেনী সমিতি মিলনায়তনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ কর্তৃক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা জয়নুল আবেদিন জুবাইর বলেছেন,বাংলাদেশে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কোন পাঠ্যক্রম ছাত্রজনতা মেনে নেবে না! তিনি আজ শনিবার পল্টনস্থ ফেনী সমিতি মিলনায়তনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বলেন, ৯০% সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম প্রধান এই বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম “ইসলাম” এর উপর এখন গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ইসলাম বিদ্বেষী চক্ররা উঠে পড়ে লেগে গেছে কিভাবে এই পবিত্র ধর্ম ইসলাম কে বাংলার জমীন থেকে মুছে ফেলা যায়। এতদিন তারা অনলাইনে ব্লগিং-এর মাধ্যমে, ফেইসবুক টুইটারের মাধ্যমে অযাচিত নোংরামীর মাধ্যমে আমদের ইসলাম ধর্ম কে কুলষিত করতে চেয়েছিল, যা ইতিমদ্ধে আপনারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন তাদের তথাকথিত “মুক্তমনা”র অভিপ্রায়! তারই ধারাবাহিকতায়, তাদের দোসররা জাতীয় শিক্ষানীতিতে নগ্ন হামলা চালিয়েছে। বর্তমান শিক্ষানীতির উদাহরণ দিয়ে বলতে গিয়ে অনেক কথাই চলে আসবে, সরকার কর্তৃক প্রকাশিত তার নিজেস্ব ওয়েবসাইটে শিক্ষানীতির পূর্ণাঙ্গ গেজেটে আপনারা তা দেখতে পারবেন। কিছু না বললেই নয়, দ্বিতীয় শ্রেনির বাংলা বই থেকে বাদ দেয়া হয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর জীবন চরিত,তার সাথে বাদ দেয়া হয়েছে খলিফা হযরত আবু বকর রাঃ শিরোনামে একটি সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত,বাদ দেওয়া হয়েছে ৫ম শ্রেনিতে পঠিত কাজী কাদের নেওয়াজের “শিক্ষা গুরুর মর্যাদা” নামক একটি কবিতা। যা বাদশাহ আলমগীর মহত্ব বর্ণনা উঠে এসেছে এবং শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে আদব কেমন হওয়া উচিত তা বর্ণনা করা হয়েছিলো। ৯ম শ্রেনিতে পঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা বিখ্যাত “উমর ফারুক” কবিতা সহ অসংখ্য পাঠ্যসমুহ বাদ দেয়া হয়েছে। শুধু কি তাই? ৯ম-১০ম শ্রেনির বাংলা বইতে প্রবেশ করানো হয়েছে “সাকোটা দুলছে” শিরোনামের কবিতা, যেখানে৪৭ এর দেশভাগকে হেয় করা হচ্ছে, যা দিয়ে কৌশলে “দুই বাংলা এক করে দেওয়া” অর্থাৎ বাংলাদেশকে ভারতের অন্তর্ভূক্ত হতে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, আর প্রবেশ করানো হয়েছে “সুখের লাগিয়া” নামক একটি কবিতা, যা হিন্দুদের রাধা-কৃষ্ণের লীলাকৃর্ত । কেন এমনটি করা হল? পবিত্র ধর্ম ইসলাম কে কেন এভাবে হেয় করা হল! ইসলাম আমাদের মূল্যবোধ শিখায়, আদব কায়দা শিখায়,ইসলাম থেকে দূরে থাকার জন্য আজ সমাজে এতো অন্যায় অবিচার চলছে। কোরআন-সুন্নাহ’র সঠিক ব্যবহারের অভাবে সোহাগী জাহান তনুর মতো আমাদের অসংখ্য বোনদের ইজ্জত হারা হচ্ছে, সমাজে মদ-মাদকের আখরা বেড়েই চলেছে। ইসলাম বিদ্বেষীরা কি এগুলা দেখে না?
প্রধান বক্তা ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সোলায়মান ফরিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষা নাই বললেই চলে যার প্রভাবে অশ্লীলতা আজ চরমভাবে বিরাজ করছে। যার মূল কারণ ইসলাম বিদ্বেষীদের করাল গ্রাসে ইসলাম থেকে দূরে থাকা! ইসলাম বিদ্বেষীদের কারণে শিক্ষক নামের কলঙ্গ পরিমলদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছারা আজকাল স্কুল-কলেজে নারীদের ফরজ পর্দা-হিজাব কে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এরই সাথে ঘটে গেল আরেকটি ন্যাকার জনক ঘটনা, এই বছরে অনুষ্ঠিত হওয়া এইচ.এস.সি পরীক্ষায় বাংলা ১ম ও ২য় প্রশ্নপত্রে করা হল ইসলাম বিদ্বেষী সৃজনশীল প্রশ্ন! ৬ষ্ঠ শ্রেণির ‘ ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা ‘ বইয়ে অসংখ্য ভুল। যেখানে প্রায় ২৪টি স্থানে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআন শরীফের আয়াত ও হাদীসের রাসূল এর মাঝে প্রায় ৪৪ টি অংশে ভুল রয়েছে। প্রতিটি পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় পবিত্র আল-কোরআন ও হাদীস হরীফের ভুল উচ্চারণ তুলে ধরা হয়েছে, আরবি হরফ গুলো বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। এইভাবে ইসলামের শত্রুরা পবিত্র ধর্ম ইসলামের পিছনে উঠে পড়ে লেগেছে।
সরকারকে আমরা জানিয়ে দিতে চাই অবিলম্বে এই শিক্ষানীতি আমাদের আলেম সমাজকে সাথে নিয়ে পরিমার্জন করে তৈরি করতে হবে, ৬ষ্ঠ শ্রেণির’ ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা ‘ বইয়ে ভুল এবং বিকৃত ভাবে কোরআন-হাদীস উপস্থাপনের দায়ে “শিক্ষামন্ত্রী” কে পদত্যাগ করতে হবে ও সংশ্লিষ্ট জড়িতদের আইনের কাঁঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে শাস্তি প্রদান করতে হবে,এইচ.এস.সি পরীক্ষায় ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক উস্কানীমূলক প্রশ্নপত্র করায় সংশ্লিষ্ট জড়িতদের আইনের কাঁঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে শাস্তি প্রদান করতে হবে এবং ভবিষ্যতে ইসলামের শত্রুরা যাতে এমন ধৃষ্টতা না দেখাতে পারে অবিলম্বে সেইরূপ যথার্থ ব্যবস্থা নিতে হবে, প্রয়োজনে আমদের আলেম সমাজ কে সাথে কাজ করতে হবে। অন্যথায় সারা বাংলার ধর্মপ্রাণ ইসলাম প্রিয় কোটি কোটি মুসলিম জনতাদের সাথে নিয়ে এইসকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দূর্বার আন্দোলন করা হবে।
এছাড়াও আর বক্তব্য রাখেন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পরিষদের অর্থ সম্পাদক এডভোকেট শাহীদুল আলম রেজভী,ইসলামী ছাত্রসেনা কেন্দ্রীয় সভাপতি ছাত্রনেতা এম মনির হোসাইন। ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, এর সভাপতিত্ব এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।