খবরের বিস্তারিত...

আহলে বায়াত

আহলে বাইত কারা ?? — গোলাম দস্তগীর লিসানী

আহলে বাইত নিয়ে আমাদের সচেতন মুসলিমদের মধ্যে অনেক অনেক প্রশ্ন।

আহলে বাইতের শাব্দিক অর্থ গৃহবাসী। প্রায়োগিক অর্থ পরিবার।
ইসলামে “আহলে বাইত” বলতে “আহলে বাইতে রাসূল দ.” বোঝানো হয়। অবশ্যই, রাসূল বলতে এখানে নবী আদম বা নবী ইব্রাহিম বোঝানো হচ্ছে না, নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বোঝানো হয়।

তাই আহলে বাইত মানে হল রাসূল দ.’র পরিবার।

আহলে বাইত কেন গুরুত্বপূর্ণ?

কারণ, রাসূল দ. বলেছেন, আমার আহলে বাইত নূহ আলাইহিস সালামের তরীর মত, যারাই এর আশ্রয়ে যাবে, মুক্তি পাবে, যারাই আশ্রয়ে যাবে না, ধ্বংস হয়ে যাবে।

এছাড়াও অসংখ্য হাদীসের বাইরে আর একটি হাদীস গুরুত্বপূর্ণ, মুসলিম শরীফের ২,৪০০ শতকের সিরিয়ালের হাদীসটায় রয়েছে, রাসূল দ. আমাদের কাছে দুটি বিষয় রেখে যাচ্ছেন, এক কুরআন আরেক আহলে বাইত। আহলে বাইত ও কুরআন হাউজে কাউসারের পাড় পর্যন্ত একত্র থাকবে এবং কিয়ামাত পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হবে না।

আরো একটি হাদীসে বলা হয়েছে, ইমাম মাহদী আসার আগ পর্যন্ত কিয়ামাত হবে না এবং তিনি আহলে বাইত থেকে আসবেন। কিয়ামাতের একদিন হলেও বাকী থাকবে।

আহলে বাইত এজন্য গুরুত্বপূর্ণ যে,

যে ব্যক্তি আহলে বাইতের আশ্রয় গ্রহণ করবে না সে রাসূল দ.’র কথা অনুযায়ী ধ্বংস হয়ে যাবে।
অপরদিকে এজন্য গুরুত্বপূর্ণ যে, রাসূল দ. কুরআনের বাইরে দুটা বিষয় রেখে যাবার কথা বলেছেন, একটা তাঁর সুন্নাহ্ অপরটা তাঁর আহলে বাইত।
আল্লাহ্ বলেছেন, রাসূল দ.’র নুবুয়তের হক আদায় হবে না তবে নিকটজনের আনুগত্যে তা হতে পারে। বুখারী শরীফে আবু হুরাইরা রা.’র রেওয়ায়েতে বর্ণনা হয়, নিকটজন মানে আহলে বাইত।

আহলে বাইত কারা?

তারাই আহলে বাইত যাদেরকে আল্লাহ্ ও রাসূল দ. আহলে বাইত বলেছেন।

কাদেরকে আহলে বাইত বলেছেন আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল দ.?

কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী রাসূল দ.’র সন্তানগণ, রাসূল দ.’র নাতি-নাতনীগণ, রাসূল দ.’র স্ত্রীগণ এবং রাসূল দ.’র সকল বংশধর আহলে বাইত।
আর যাদের রাসূল দ. আহলে বাইত সম্বোধন করেছেন তাঁরাও আহলে বাইত, যেমন মাওলা আলী রা. রাসূল দ.’র সন্তান বা অধস্তন রক্তধারায় না হয়েও তিনি আহলে বাইতের প্রধান।

আহলে বাইত কি এখনো আছেন?

উপরে উল্লিখিত তিনটা আলাদা হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, কিয়ামাত পর্যন্ত আহলে বাইত থাকবেন। কেননা, আহলে বাইত ও কুরআন কিয়ামাত পর্যন্ত একত্রিত থাকবে। কিয়ামাত পর্যন্ত আমাদের কাছে রাসূল দ. কুরআন ও সুন্নাহ্ এবং কুরআন ও আহলে বাইত রেখে যাচ্ছেন। সুস্পষ্ট কথা। আহলে বাইত নূহ আলাইহিস সালামের তরীর মত, যে আহলে বাইতের আশ্রয়ে যাবে সে রক্ষা পাবে যে যাবে না সে ধ্বংস প্রাপ্ত হবে। সুস্পষ্টভাবেই আহলে বাইত আমাদের মাঝে বিরাজমান।
ইমাম মাহদী এখনো আসেননি। তাঁর আগমন হবে আহলে বাইত থেকে যদি কিয়ামাতের একদিনও বাকী থাকে। তার মানে ইমাম মাহদী আসার আগ পর্যন্ত আহলে বাইত আছে। তিনি এলেও আহলে বাইত থাকবেন।

ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে আহলে বাইত।

সাহাবী, তাবেয়ী এবং তাবে তাবেয়ীদের যুগে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনের সকল বংশধরকে বলা হতো ’ইবনুর রাসূল দ.’ বা ‘রাসূল দ.’র সন্তান’। তাঁদের সম্বোধনও করা হতো এভাবে, ‘হে ইবনুর রাসূল দ…. আপনি…’। ইতিহাসের দৃষ্টিকোণেও আহলে বাইত খুবই স্পষ্টভাবে প্রকাশিত।

রাসূল দ.’র বংশধরদের মধ্যে কারা আহলে বাইত?

যাঁরা বাবা অথবা মায়ের দিক থেকে, ইমাম হাসান অথবা ইমাম হুসাইন রা.’র অথবা আল্লাহর রাসূল দ.’র যে কোনও সরাসরি নাতি-নাতনীর বংশধর তাঁরা আহলে বাইত।

কারা আশ্রয়রূপী আহলে বাইত?

যাঁরা অবিকৃত সিলসিলা (ধারাক্রমে) সরাসরি রাসূল দ.’র সাথে খিলাফাতের দিক দিয়ে যুক্ত এবং বংশের দিক দিয়েও যুক্ত তাঁরা মুমিনদের অনুসরণীয় এবং নেতৃস্থানীয়। অবশ্যই তাঁদের আক্বিদা আহলুস সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআহ্’র যে কোনও পরস্পরস্বীকৃত ধারার আক্বাঈদ সমূহের মধ্য থেকে হতে হবে।

~~ গোলাম দস্তগীর লিসানী

Comments

comments