বিশ্ব প্রেক্ষাপটে সুন্নীয়তের রাজনৈতিক আন্দোলন – অধ্যক্ষ আল্লামা জুবাইর
বিশ্ব প্রেক্ষাপটে সুন্নীয়তের রাজনৈতিক আন্দোলন
–অধ্যক্ষ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর
বর্ণিত আছে, ৬৩৬ খ্রীষ্টাব্দে বায়জানটাইন সম্রাট হিরাক্লিয়াস মুসলিম সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে প্রতিহত করার নিমিত্তে স্বীয় ভ্রাতা
ঠিক খালিদের মত নির্ভেজাল সুন্নীয়তের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে মুসান্না ও আবু ওবায়দা (রা:) ৩৬৪ খ্রীষ্টাব্দে হীরারাজ্য, ৬৩৮ খ্রীষ্টাব্দে কুফা ও বসরা, ৬৪১ খ্রীষ্টাব্দে মেসোপটেমিয়া জয় করার মাধ্যমে পারস্য ও মধ্য এশিয়ায় ইসলামের বিজয় কেতন উড্ডীন করেন। যার ফলে পারসিপলিস, ইস্পাহান, পারস্য, কিরমান, তাবারিস্তান, আজারবাইজান, সিস-ান, মাকরান ও
খোরাসান প্রভৃতি এলাকায় ইসলামী সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয়।
অনুরূপ আরেক মহাবীর আশেকে রাসূল আমর ইবনুল আস (রা:) এর দুর্ধর্ষ অথচ আদর্শিক অভিযানে ৬৩৭ খ্রীষ্টাদ্ধে প্যালেষ্টাইন, ৬৩৯ খ্রীঃ আলেকজান্দ্রিয়া, ৬৪৪ খ্রীঃ উত্তর আফ্রিকার ত্রিপলী পর্যন- ইসলামী সাম্রাজ্য বিস-ৃত হয়। আটলান্টিক মহা সাগরের পূর্ব পাড় পর্যন্ত
ইসলামী সম্রাজ্য বিস-ৃত হয়। অতঃপর খোলাফায়ে রাশেদীনের তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান (রহ:) এর
খেলাফতকালে নিশাপুর, সার্ভ, বলখ, তুখারিস-ান মুসলিম শাসনাধীনে আসে।
পশ্চিমাঞ্চলে এশিয়া মাইনর, তাজাকিস্তান, আর্মেনিয়া ৬৫২ খ্রীঃ মুসলিম সম্রাজ্যভূক্ত
হয়। এমনকি সাইপ্রাস উপসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জেও মুসলিম আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয।
৬৬৫ খ্রী আমীরে মুয়াবিয়া কর্তৃক মহাল- াবের নেতৃত্বে সিন্ধুনদের তীর পর্যন্ত এবং
৬৭৮ খ্রী: জিয়াদের পুত্রের নেতৃত্বে বুখারা, সমরখন্দ ও নরামিজ মুসলিম সম্রাজ্যভূক্তি
হয়।
উমাইয়া বংশের ৬ষ্ঠ খলিফা আল-ওয়ালিদ এর সময় মুসলিম সাম্রাজ্য ইউরোপ
মহাদেশে বিস্তৃতি লাভ করে। মুসলিম সীমানা আমু দরিয়া থেকে আটলান্টিক উপকুল
পর্যন্ত প্রসারিত হয়। যাদের নেতৃত্বে বিজয় সম্ভব হয়েছিল তম্মধ্যে হাজ্জাজ,
কুতাইবা, মুহাম্মদ বিন কাসিম, তারিক, মুসা বিশেষভাবে উলে- খযোগ্য। এরা ছিলেন
মুসলিম বীর কেশরী, সত্যিকারের সুন্নীয়তের তাবেদার, শৌর্য বীর্যশালী জগদ্বিখ্যাত
রণকুশলী, পৃথিবীর ইতিহাসে যাদের তুলনা বিরল। ইতিহাসে তারিক-মুসার আফ্রিকা
ও স্পেন বিজয় আজও অমর কিংবদন্তী হয়ে আছে।
উমাইয়া শাসনকালের বিস-ৃত সাম্রাজ্য আব্বাসীয় শাসনকাল পর্যন্ত বলবৎ থাকে।
অবশ্য আব্বাসীয় শাসনকালে একটি বাতিল শক্তির উদ্ভব হয়েছিল; যাদেরকে বুয়াইয়া
বংশ বলা হয়। তারা ৯৪৪ খ্রীঃ থেকে ১০৫৫ খ্রীঃ পর্যন্ত শিরাজ, ইস্পাহান, কিরমান
ও খিজিস্তান এলাকায় শিয়া মতাবলম্বী রাজত্ব কায়েম করলেও পরবর্তীতে সেলজুক
বংশের সুন্নী সৈনিক তুঘলগ বেগ বাগদাদ দখল করে। সর্বশেষ বুয়াইদ আমীর মালিক
আররহীমকে পরাজিত করলে বুয়াইদ বংশ ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়। অবশ্য তাদের বীজ
আজও ইরানে এবং ইরাকের কুর্দী ও পাকিস্তানের কিছু এলাকাতে বিরাজমান।
সেলজুক বংশ ছিল (১০৫৫-১১৯৪ খ্রীঃ) খাঁটি সুন্নয়ীত প্রতিষ্ঠার অগ্রনায়ক। যখন
আব্বাসীয় মুতাজেলী আকিদার যুক্তিভিত্তিক মতবাদ এবং বুয়াইয়িদের শিয়া মতবাদ
মহাশক্তিরূপে আত্মপ্রকাশ করে, তখন সেলজুক বংশের আলপ আর সালান (১০৬৩-
৭৩) মালিক শাহ (১০৭৩-৯২ খ্রী:) ও তার শাসনকর্তা নিজাম-উল মুলক এবং সে
সময়ের শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ইমাম গাজ্জালীর সমন্বিত প্রচেষ্টার বদৌলতে সুন্নী আশয়ারী
মতবাদ মুসলিম বিশ্বে সতিকার খাঁটি আক্বিদা ভিত্তিক মাজহাবের পথ নির্দেশ করে।
বাগদাদের নিজামিয়া মাদ্রাসা হয়ে উঠে সুন্নীয়ত শিক্ষার পাদপীঠ। সমগ্র আরব ও
ভারতবর্ষ পর্যন্ত এ মাদ্রাসায়ে নিজামিয়ার সুন্নীয়ত ভিত্তিক আলোর দিশা ছড়িয়ে পড়ে।
অন্যদিকে ইলখানী বংশের দুর্ধষ ধ্বংসকারী হালাকু খান বাগদাদ নগরী তিন দিনের
মধ্যে ধ্বংস করে দিলে যদিও মুসলিম সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র ধ্বংস হয়ে যায়, তদুপরি
মুতাজেলীদের রচিত অসংখ্য পাণ্ডুলিপি ধ্বংস হওয়াতে বাতিল মুতাজেলী আক্বিদা তথ্য
ও তত্ত বিলুপ্ত হয়ে যায়। সুন্নীয়ত এরপর আবার ধীরে ধীরে পূন: প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
সুন্নী আন্দোলনের আরেক মহানায়ক ছিলেন গাজী সালাহ উদ্দীন আইয়ুবী (১৯৭৪-
৯৩)। বিখ্যাত ক্রসেডার সালাহ উদ্দীন যেমন ছিলেন খাঁটি সুন্নী মুসলমান, তেমনি
ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা, সুন্নী মুসলমানের কর্ণধার, আবেদ, আশেকে
রাসূল। তাঁরই বংশের আর এক আশেকে রাসূল বাদশাহ নূরউদ্দীন জঙ্গী ছিলেন প্রকৃত
সুন্নী মুসলিম। তিনিই রাসূলে পাক (দ:) কর্তৃক স্বপ্নযোগে নির্দেশ পেয়ে দুইজন খ্রীষ্টান
লাশ চোরকে পাকড়াও করেন এবং হুজুরের মাজার শরীফের চতুর্পার্শ্ব শীশা ঢালাই
করে দেন।
ভারতবর্ষে ৭১০ খৃ: ইসলামের বিজয় কেতন এবং সুন্নীয়তের মহান বার্তা
বহন করে আনেন ১৭ বছরের বীর যুবক মুহাম্মদ বিন কাসিম। তাঁরই অনুসারী
বিখ্যাত ভারত বিজয়ী সুলতান মাহমুদ গজনভী ছিলেন সত্যিকার সুন্নী বীর সেনানী।
তিনি ১০০০ খ্রী: থেকে ১০২৭ পর্যন্ত ১৭ বার ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন এবং
প্রতিবারই বিজয়ী হন। ইউরোপীয় ও ভারতীয় ঐতিহাসিকগণ যদিও তার আক্রমণকে
দস্যুবৃত্তি বলেছেন, কিন্তু নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তার
আক্রমণের ফলে ভারতীয় পৌত্তলিক রাজাদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে যায়। যার
ফলশ্রুতিতে ইসলামের প্রকৃত মোবালি- গগণ, ফকীর-দরবেশ, পীর-বুজর্গ ও
অন্যান্য মুসলিম শাসকগণ এ ভারতবর্ষে আগমন করেন এবং খাঁটি সুন্নীয়ত ভিত্তিক
মতবাদে আকৃষ্ট করে অসংখ্য লোকদেরকে হিদায়াত দান করেন। সেই নুরানী
আলোকমালা আজও পাক-ভারত উপমাহাদেশে বিরাজমান।
ভারতবর্ষে মাহমুদ অভিযান পরিচালনা না করলে আমরা পেতাম না অসংখ্য অলি-আওলিয়াদেরকে এবং তাঁদের তরিকতের দর্শনকে। সুলতান মাহমুদ গজনভী যে একজন খাঁটি সুন্নী ও আশেকে রাসূল ছিলেন, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। বর্ণিত আছে, একদা তার গোলাম আয়াজের বেটা মুহাম্মদ তার সামনে আসলে তিনি ডাক দিয়ে বলেন- ইয়া ইবনা আয়াজ তায়ালে, অর্থাৎ হে আয়াজপুত্র! এদিকে এস কাছেই আয়াজের পিতা উপসি’ত ছিলেন। তিনিআপত্তি করলেন-প্রভূ! আপনি সর্বদা আমার ছেলেকে ‘‘ইয়া মুহাম্মদ” বলে ডাকেন,
আজ কেন এভাবে ডাকলেন? উত্তরে মাহমুদ বললেন-আয়াজ। তোমার ছেলের নাম
আমার নবীর নামে রেখেছ। আমি বিনা অযুতে আমার নবীর নাম মুখে নেই না। আজ
আমার অজু ছিল না, তাই ‘‘ইয়া ইবনা আয়াজ” ডেকেছি।
সুলতান মাহমুদ গজনভীর পর ভারতবর্ষে যে মহানায়ক সফল ও স’ায়ী অভিযান
পরিচালনা করেন, তিনি হলেন মুহাম্মদ ঘুরী। তিনি তের বার দিল্লী ও ভারতের
বিভিন্ন এলাকা অভিযান করে ব্যর্থ হন। বিফল মনোরথ হয়ে ঘুরী চিন্তিত ও বিষণ্ন
চিত্তে দিনাতিপাত করছেন। এক রজনীতে হঠাৎ সপ্নযোগে দেখছেন, একজন মহান
দরবেশ তাকে ভারত অভিযান করতে নির্দেশ দেন। কাল বিলম্ব না করে মুহাম্মদ
ঘোরী দিল্লী আক্রমণ করেন এবং বিজয় লাভ করে সেখানে একজন শাসনকর্তা
নিযুক্ত করে যখন আফগানের পথে প্রত্যাবর্তন করছেন, ঠিক তখনি আজমীরের অদূরে
দেখা পেলেন সেই মহান সাধক পুরুষের স্বপ্নে যাঁর দেখা মিলেছিল। তিনি আর কেউ
নন মুশকিল কোশা, সুলতানুল হিন্দ, আতায়ে রাসূল গরীবে নেওয়াজ খাজা মাঈনুদ্দীন
চিশ্তি (রা:)। শ্রদ্ধায় অবনত মস্তকে কুর্নিশ করলেন ঘরী এ মহান আধ্যাত্মিক
পুরুষকে। সুতরাং ঘরীর ভারত বিজয়ের পেছনেও ছিল এক মহান অলীর
অনুপ্রেরণা। যিনি মদিনার রওজায়ে আকদাস থেকে আদেশ পেয়ে ভারতবর্ষে ইসলাম
প্রচারে আগমন করেছিলেন।
১২০৩ খ্রীষ্টাব্দে যে মহান বীর সেনানী বঙ্গ বিজয় করেন,
তিনিও ছিলেন একজন খাঁটি সুন্নী মুসলিম। তার বঙ্গ বিজয়ের ফলে বাংলাদেশে
অসংখ্য অলী আওলিয়ার পদার্পন হয়। কথিত আছে, তিনি ফকীহ দরবেশদের
পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। এছাড়াও শেরশাহ্ জহিরুদ্দীন বাবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান
ও সম্রাট আলমগীর সকলেই ছিলেন খাঁটি সুন্নী সম্রাট। কেবলমাত্র সম্রাট আকবরই
‘দ্বীন-ই-ইলাহী’ নামক ভ্রান- জগাখিচুরী মার্কা ধর্মনিরপেক্ষ ফেরআউনী ধর্মমত
প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু মুজাদ্দেদ আলফে সানীর নেতৃত্বে ও কারামতে ‘দ্বীন-ই-
ইলাহী’ মতবাদ সম্রাট জাহাঙ্গীর এর সময় চিরতরে বিলুপ্ত হয়। এ ক্ষেত্রে সুন্নী
আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন এক আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ মুজাদ্দেদে আলফেসানী শায়খ
আহমদ সিরহিন্দী (রা:)। তারই উত্তর পুরুষ ছিলেন শাহ্ অলীউল্লাহ (রা:) ও শাহ
আব্দুল আজিজ (রা:)। সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব যাঁর শাসনামলে
ভারতবর্ষে সুন্নী আক্বিদা সবিশেষ প্রচার লাভ করে। তিনি ৭০০ সদস্যের যে ওলামা
পর্ষদ গঠন করেছিলেন, তাদের সভাপতি বা প্রেসিডেন্ট ছিলেন আল্লামা মোল- া
জিউন (রাহ:)। যিনি তার উসূলের কিতাবসমূহে এবং বিশেষ করে তাফসীরে
আহমদীতে ৭২ ফেরকার বাতিলী মতবাদ, তাদের নামসহ এর স্বরূপ লিপিবদ্ধ করে
গেছেন। তদুপরি ফতওয়ায়ে আলমগীরি হলো সুন্নিয়তের সুবিশাল এশায়াত গ্রন্ত।
এ নাতিদীর্ঘ আলোচনায় দিবালোকের ন্যায় যে সত্যটি ফুটে উঠেছে, তা হলো
ইসলামী তথা মুসলিম বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় হযরত ওমর (রা:) এর সময়কাল হতে ১৭৬৪
খ্রী: পর্যন্ত যাঁরা মশাল বর্দার হিসেবে নায়কোচিত ভূমিকা পালন করেছিলেন-তারা
সকলেই ছিলেন সুন্নী মতাদর্শে অনুসারী ধর্মপ্রাণ খাঁটি মুসলিম।
মুসলিম সাম্রাজ্যের আরেকটি শক্তিশালী ধারা হলো সেলজুকী বংশের কৃতি সন্তান
ওসমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত তুর্কী অটোমান সাম্রাজ্য। ওসমান থেকে মহামতি সুলাইমান
পর্যন্ত শাসকদের অভিযানের ফলশ্রুতিতেই রুমানিয়া, কাজাখ, কনকাস, বসনিয়া,
আলবেনিয়া এবং রাশিয়ার অধিকাংশ স্থানে ইসলাম সমপ্রসারিত হয। অষ্টাদশ
শতকের পূর্ব পর্যন্ত ইসলাম ইউরোপীয় এলাকায় মহাশক্তিরূপে বিরাজমান ছিল।
সর্বশেষ মুসলিম শাসকদের দূর্বলতার সুযোগে ১৭৮৯ সালের ২য় মহাযুদ্ধের পর
মুসলিম বিশ্ব হৃত সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হয়। কিন্তু বৃটিশের রেখে যাওয়া
শাসনতন্ত্র এবং তাদের ষড়যন্ত্রের প্যাঁচকলে মুসলিম সাম্রাজ্য খন্ড-খন্ড হয়ে আলাদা-
আলাদা সার্বভৌমত্বসহ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আর এ সুযোগে নজদের ভ্রান্ত ওহাবী
ইজমের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাবের কুটিল ষড়যন্ত্রে আরবের সৌদি
পরিবারে প্রথম ওহাবীবাদের বীজ প্রথিত হয়। দ্বাদশ হিজরী শতকে অবশ্য পূর্বেকার
ইবনে তাইমিয়ার (৭০০ হি:) জাহমিয়া আক্বিদাও প্রসার লাভ করেছিল। অতঃপর
ভারতবর্ষে ইসমাঈল দেহলভী, রশিদ আহমদ গাঙ্গোহী প্রমুখদের নেতৃত্বে পাকিস্তানে
আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে ওহাবী মতবাদ আধুনিকরূপে প্রসার লাভ করে।
অন্যদিকে মিশরে ছায়্যেদ কুতুব, হাসানুল বান্নার নেতৃত্বে এবং আরব উপদ্বীপে ইবনে
আব্দুল ওহাবের পৌত্র আবদুর রহমানের প্রচারণা ও প্রকাশনায় ওহাবীবাদ নতুন
আন্দোলনরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ দীর্ঘ ইতিহাসের অবশ্যই প্রামাণ্য তথ্য আছে।
তবে স্বল্প পরিসরে এখানে তার বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়।
আঠার শতকের পর বিশ্ব প্রেক্ষাপট আধুনিকতায় রূপান্তরিত হয়। রাশিয়ার সমাজতন্ত্র
চালুকরণ, বৃটিশের আধুনিক গণতন্ত্র, আমেরিকান ধনতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ প্রভৃতির
উত্থান-পতনে বিশ্ব এখন এক স্নায়ুযুদ্ধের সন্ধিকাল অতিক্রম করছে। অন্যদিকে
আমেরিকা একচ্ছত্র মোড়লীপনায় গদগদ করছে। এ ক্রান্তিকালে মুসলিম বিশ্বও নীরব
নয়। সুতরাং এখনি সময় এসেছে সকল মোহান্ধতা ও অলসতার ভারমুক্ত হয়ে মুহাম্মদ
বিন কাসিম, মাহমুদ গজনভী, মুহাম্মদ ঘুরী, বখতিয়ার খিলজী, সালাউদ্দীন আইয়ুবী,
তারিক, মুসা ও খালেদ সাইফুল্লার মত ইশকে রাসূলের মহামন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে শানিত
কৃপাণ হাতে খাঁটি সুন্নী আন্দোলনের প্লাটফর্মে সমবেত হয়ে প্রকৃত ও নির্ভেজাল
আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া। বাতিলের বন্দীদশা থেকে মুক্ত করতে হবে এদেশের সুন্নী
জনতাকে, প্রতিষ্ঠিত করতে হবে সুন্নীয়ত ভিত্তিক মতাদর্শের ইসলামী সমাজ। কারণ
সত্য সমাগত, মিথ্যা পদানত হবেই। বুয়াইয়িদদের শিয়া রাজত্ব টিকেনি, আব্বাসীয়
মুতাজেলী মতবাদ ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে। কাজেই ওহাবী-মওদুদীবাদেরও কবর রচিত
হবেই। আর সমাজতন্ত্র, ধনতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ধ্বংসস্তুপের উপর সর্বকালের সেরা মতাদর্শ সুন্নিয়ত ভিত্তিক রাজননৈতিক আন্দোলন অবশ্যই বিজয় লাভ করবে।
* লেখক : মহাসচিব, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ।