খবরের বিস্তারিত...

বইমেলায় মহানবীর অবমাননা করে বই প্রকাশে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ নেতার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ।।

বইমেলায় মহানবীর অবমাননা করে বই প্রকাশে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ নেতার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ।।

ফেব্রু. 15, 2016 সাংগঠনিক খবর

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর ঢাকা মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মুহাম্মদ শাহীদ রিজভী বলেছেন- বাক স্বাধীনতার নামে তথাকথিত মুক্তমনা সংস্কৃতি চর্চার নাম দিয়ে গণমানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে হামলার অধিকার কারো নেই। বেশ ক’ বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ব্লগার এদেশের অধিকাংশ মানুষের ধর্ম বিশ্বাস ও অনুভূতির উপর আঘাত করে ব্লগ লেখা ও পরবর্তীতে ধর্মীয় বলয় পরিচয়ে জঙ্গীবাদী কর্তৃক কয়েকজন ব্লগার হত্যা মানুষের মনে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছিল। একপর্যায়ে সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গীবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা পালন করায় একসময় পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়।

কিন্তু সম্প্রতি সরকারী আয়োজনে বাংলা একাডেমী’র উদ্যোগে চলমান “একুশের বই মেলা”-য় কিছু মুক্তমনা নামধারী লেখক কর্তৃক বাক স্বাধীনতার নামে ধর্মীয় অনুভূতিতে হামলা করে বই বের করার খবরে জনমনে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার উদ্রেক হয়েছে।

আপাতদৃষ্টে মনে হয়, এ দুটি গোষ্ঠি পরষ্পর বিরোধী কর্মে তৎপর। অথচ গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝা যায় যে, আপাতদৃষ্টে পরষ্পরবিরোধী এ দুটো গোষ্ঠির উদ্দেশ্য সাধনের “বেনিফিসায়ারী”-র রসুনের কোয়া এই শেকড়ে। এর ফলাফল- দেশে অস্থিতিশীলতা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করে সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রকে একটি অরাজক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া। একটা গোষ্ঠি মানুষের হাজার বছরের লালিত বিশ্বাস ও ধর্মীয় অনুভূতিতে হামলা করে, আরেক গোষ্ঠি ধর্মীয় অনুভূতির নাম দিয়ে নিজ হাতে প্রথম গোষ্ঠিটির বিচারের নামে আহত/নিহত করে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি ও মহান আল্লাহ তাআলার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের স্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তৎপর। তাই বলা যায়, আপাতদৃষ্টে পরষ্পর বিরোধী এ দু’টো চক্র কিন্তু পারষ্পরিক দ্বন্দ্ব সংঘাতের অভিনয় করে একই “পারপাজ সার্ভ” করছে।

বাংলা একাডেমী শুধু একটি রাষ্ট্রীয় সংগঠন নয়, এটি জাতীয় চেতনা প্রতিষ্ঠার কর্তা প্রতিষ্ঠান। দেশের গণমানুষ তথা প্রান্তিক জনগোষ্ঠি বইমেলায় যায় না। বইমেলায় উচ্চ মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও সাহিত্যপ্রেমি লোকজনের আনাগোনা বেশী। স্বভাবতঃই বইমেলায় আগত লোকজনকে সচেতনজেনগোষ্ঠি বলে ধরে নেয়া যায়। আর দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠি বইমেলায় না আসলেও বাংলা একাডেমী দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চেতনা ও অনুভূতির প্রতি অশ্রদ্ধা রাথতে পারে না। বিশেষতঃ এ দেশের আপামর জনসাধারণের কর এর টাকায় পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠান দেশের মানুষের বিশ্বাস ও অনুভূতির প্রতি অশ্রদ্ধা পোষণ করার অধিকার সংরক্ষণ করে না।অেথচ বইমেলায় প্রকাশিত বিভিন্ন বই নামক চটিগুলোতে যেভাবে আল্লাহ, রাসুল ও ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা করা হচ্ছে তা আমাদের মহান সংবিধান ও আইনের প্রতি অবমাননা বটে।

তথাকথিত মুক্তমনারা সাহিত্যচর্চার নাম দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, শ্রেণি সংঘাত বৃদ্ধি ও অশ্লীলতার চর্চা ইত্যাদির মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছে। এ চক্রটি নিজেদের মুক্তমনা বুদ্ধিজীবী পরিচয় দানে আত্মতুষ্টি অনুভব করলেও প্রকৃতপক্ষে এরা জাতির “বিবেক ও বুদ্ধি”-কে অনৈতিকতার সাগরে জলাঞ্জলি দিয়ে যাচ্ছে। অথচ এ জাতির বিবেক ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার যাঁরা পথপ্রদর্শক হিসেবে প্রাতঃস্মরণীয়, যেমনঃ জ্ঞান তাপস ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী নজরুল ইসলাম, সৈয়দ মুজতবা আলী, আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী, জসিম উদ্দীন প্রমুখ মহাত্মাগণ সমাজ থেকে ধর্মান্ধতা ও কূপমন্ডুকতার উচ্ছেদ করার সংগ্রামে রত থেকে নিজ নিজ ব্যক্তিজীবনে পুরুষানুক্রমে লালিত ধর্মবিশ্বাসের লালন ও পালন করেছেন। তাঁরা কেউই যেমন ধর্মান্ধ ছিলেন না, ঠিক তেমনি ধর্মবিরোধীও ছিলেন না। বরঞ্চ জাতির নৈতিক ভিত্তি গড়ে দিতে ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ও ব্যক্তি জীবনের ধর্মীয় অনুশাসনের সংরক্ষণে তাঁরা একেক জন যুগ সংস্কারকের ভূমিকা পালন করে গেছেন।

অন্যদিকে যারা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে জঙ্গীবাদের প্রসার ঘটাচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তারা স্রষ্টা ও ধর্মীয় বিধান থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করছে। কারণ ধর্ম বিশেষতঃ ইসলাম মানবসমাজে শান্তির সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলে। ইসলাম মানবজাতিকে স্রষ্টার প্রতি অনুগত থেকে শান্তিপূর্ণ ও নৈতিকতা ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার শিক্ষা দেয়। ইসলাম সবসময় চরমপন্থাকে দমন করে এসেছে। তাই আজ যারা ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ চর্চা করছে, নিদ্বিধায় বলা যায়, তারা ইসলামের সেবা নয় বরং চিরশান্তির জীবনব্যবস্থা ইসলামের মর্মমূলে কুঠারাঘাত করে নিজেদের বিত্ত বৈভবের পাহাড় গড়ছে।

আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সদাশয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, অতিসত্বর এই গণবিদ্বেষী দুটো চক্রকে একইসাথে দমন করা হোক। আমরা এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চাই। কারণ আমরা বিশ্বাস করতে চাই, সরকার দেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর অনুভূতি ও বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অন্যথায় জনমনে সরকারের কর্ম ও বিশ্বাস সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে।

[related_post themes="flat" id="85"]